আমার স্ত্রী
প্রাইমারি টিচার।
রাতে ডিনারের শেষে
আমার স্ত্রী ক্লাস ফোরের খাতা
দেখছিলো।
খাতা দেখতে দেখতে
আমার মিসেসের চোখ দুটো
ছলছল করে করে উঠেছে।
আমি কাছেই বসে টিভি
দেখছিলাম।
মিসেসের দিকে নজর
যাওয়াতে দেখি আমার স্ত্রী
চোখের জল মুছছে।
আমি অবাক হয়ে
জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে কাঁদছো
কেনো!!!
আমার মিসেস বললো..
ক্লাস ওয়ানের পরীক্ষায় এক রচনা
এসেছে। "my wish"
--তো কাঁদার কি হলো!!
--সব খাতা গুলো দেখলাম।
সবাই ভালো লিখেছে। --তো?
--একজনের খাতা দেখে আর নিজেকে সামলাতে
পারলাম না।
চোখ দুটো জলে ভরে
উঠলো।
--আচ্ছা বলো কি লিখেছে
ওই বেবি।
মিসেস রচনা পড়তে
শুরু করলো.....
" আমার ইচ্ছা আমি
স্মার্টফোন হবো।
আমার বাবা মা
স্মার্টফোন খুব ভালোবাসে।
কিন্তু
আমায় ভালোবাসে না।
যেখানে যায় আমার
বাবা তার স্মার্টফোন সঙ্গে করে
নিয়ে যায়।
কিন্তু আমায় সঙ্গে
করে নিয়ে যায় না।
কল এলে আমার মা তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোন ধরে।
কিন্তু আমি কান্না করলেও আমার কাছে আসে
না মা।
আমার বাবা
স্মার্টফোনে গেম খেলে। কিন্তু আমার
সাথে খেলে না।
আমি বাবাকে বলি
আমায় একটু কোলে নাও না বাবা।
কিন্তু বাবা আমায় কোলে নেয় না।
স্মার্টফোনটাই সব
সময় বাবার কোলে থাকে।
মা কে গিয়ে বলি,
মা মা চলো না আমার সাথে একটু
খেলবে।
কিন্তু আমার মা আমার উপর
রেগে গিয়ে বলে, দেখতে পাচ্ছিস না আমি এখন তোর মামার সাথে
চ্যাটে কথা বলছি।
আমার বাবা মা রোজ
স্মার্টফোন টাকে যত্ন করে
মোছামুছি করে।
কিন্তু আমায় একটুও
আদর করে না।
আমার মা যখন বাবার
সাথে ফোনে কথা বলে তখন মা
স্মার্টফোনে বাবাকে পাপ্পি দেয়।
কিন্তু আমায় একদিনও পাপ্পি দেয়নি
মা।
আমার বাবা মাথার কাছে স্মার্টফোন নিয়ে
ঘুমায়। কিন্তু আমায় কোনোদিনও জড়িয়ে ধরে
ঘুমায় না।
আমার মা রোজ চার
পাঁচবার স্মার্টফোন টিকে
চার্জ দেয়।
কিন্তু মাঝে মাঝে আমায়
খাবার দিতে ভুলে যায় মা।
কিন্তু
স্মার্টফোন টিকে চার্জ দিতে ভুলে
না আমার মা।
তাই আমি স্মার্টফোন
হবো।
আমার ইচ্ছা
স্মার্টফোন হয়ে বাবা
মায়ের সাথে সবসময়
থাকতে চাই।
.
স্ত্রীর মুখে লেখাটি
শোনার পর আমি খুব ইমোশনাল হয়ে
স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম..
--কে লিখেছে এই রচনাটি ?
--আমাদের সন্তান।
আমি স্তব্ধ হয়ে বসে
রইলাম কিছুক্ষন।
অনেক কিছুই ভেবে
চলেছি।
আমার আর আমার স্ত্রীর চোখে
তখন জলের ধারা নামতে শুরু
করেছে অঝোর ধারায়।
[Shohag Patoary]
No comments:
Post a Comment